নবীজি (সা.)-এর ১০ টি অনন্য বৈশিষ্ট্য

• ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ @ ১২:০০ এএম

শায়খ আহমাদুল্লাহ

মুহাম্মদ (সা.)-এর পবিত্র জীবনে এমন সব গুণ ও বৈশিষ্ট্যের সমাবেশ ঘটেছে, এক সঙ্গে এতগুলো গুণ ও বৈশিষ্ট্যের সমাহার আর কারো মাঝে পাওয়া যায় না। বিশ্ববাসীর জন্য উত্তম আদর্শ হিসেবে আল্লাহ তাকে মনোনীত করেছেন। আর এ কারণে, তাকে অসংখ্য বিশেষ বৈশিষ্ট্য দান করেছেন, যেন আমরা সেগুলো থেকে জীবন পথের পাথেয় সংগ্রহ করতে পারি। আজ আমরা নবীজির উল্লেখযোগ্য ১০ টি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করব।

এক. সর্বোৎকৃষ্ট চরিত্রের অধিকারী। নবীজি (সা.) এমন চরিত্রের অধিকারী ছিলেন, তারচেয়ে উত্তম চরিত্রের আর কোনো মানুষ হতে পারে না। স্বয়ং আল্লাহ তার চরিত্রের ব্যাপারে বলেছেন, নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী (সুরা কলম)। শত্রুরা তার ব্যাপারে নানা রকম অপপ্রচার চালিয়েছে। জাদুকর, পাগল, কবি, জিনগ্রস্ত ইত্যাদি অপবাদ দিয়েছে। কিন্তু তার চরিত্র এতটাই পবিত্র ছিল, ঘোর শত্রুরাও অপপ্রচারের অংশ হিসেবেও কোনদিন তার চরিত্রের গায়ে কালিমা লেপন করতে পারেনি।

দুই. সর্বোচ্চ জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। রসুল (সা.) ছিলেন সর্বাধিক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। পৃথিবীতে আরো বহু জনপ্রিয় ব্যক্তি এসেছে, সামনেও আসবে। কিন্তু তাদের জনপ্রিয়তা বিশেষ কোনো পরিমণ্ডলে, বিশেষ কোনো দেশে সীমাবদ্ধ থাকে। আবার মৃত্যুর পর ধীরে ধীরে সকল জনপ্রিয় ব্যক্তির জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করে। কিন্তু রসুল (সা.) জীবদ্দশাতেও জনপ্রিয় ছিলেন, ইন্তিকালের প্রায় পনেরোশ বছর পরও সারা পৃথিবী ব্যাপী সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব তিনি।

তিন. সর্বাধিক প্রশংসিত ব্যক্তিত্ব। তিনি পৃথিবী জুড়ে যে পরিমাণ প্রশংসিত, আর কোনো মানুষ তার ধারে কাছেও অতটা প্রশংসিত নয়। তার মুহাম্মাদ নামটার অর্থই প্রশংসিত। তৎকালীন আরবে এই নামের কোনো প্রচলন ছিল না। দাদা আবদুল মোত্তালিব সমাজের প্রথা ভেঙে প্রিয় দৌহিত্রের জন্য এই নামটি নির্বাচন করেন। এটাও রসুলের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

চার. বিশ্বস্ত ব্যক্তিত্ব। তার মতো বিশ্বস্ত মানুষ পৃথিবীতে আর আসেনি, সামনেও আসবে না। বিশ্বস্ততার এই অন্যন্য গুণের কারণে কৈশোরেই তিনি আল-আমিন উপাধিতে সিক্ত হয়েছিলেন। তৎকালীন আরবে ডাকাতির কারণে সম্পদের নিরাপত্তা ছিল না। ফলে মক্কার অনেক মানুষ নবীজির কাছে সম্পদ গচ্ছিত রাখত। হিজরতের সময় রসুল (সা.) আলি (রা.)-কে মক্কায় রেখে যান এই উদ্দেশে, রসুলের কাছে গচ্ছিত থাকা সম্পদ আলি যেন সকল পাওনাদারের কাছে পৌঁছে দেবেন। এটা এক অদ্ভুত ব্যাপার, যাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে রসুল (সা.) মক্কা ত্যাগ করছেন, সেই প্রাণের শত্রুদের আমানত তখনও রসুলের ঘরে গচ্ছিত এবং সেই আমানতের খেয়ানত যেন না হয় সে ব্যাপারে তিনি সর্বোচ্চ সতর্ক।

পাঁচ. তিনি ছিলেন জগৎসমূহের জন্য রহমত। এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেছেন, আর আমি তো তোমাকে বিশ্বজগতের জন্য রহমত হিসেবেই পাঠিয়েছি (সুরা আম্বিয়া)। আমরা অনেকে মনে করি, রসুল (সা.) শুধু মানুষের জন্য রহমত ছিলেন। আসলে তা নয়। রসুল (সা.) গোটা সৃষ্টির জন্য রহমত ছিলেন। তিনি অকারণে গাছ কাটতে, আগুন দিয়ে প্রাণী হত্যা করতে, জবাইয়ের সময় পশুকে অহেতুক কষ্ট দিতে নিষেধ করেছেন। মানুষের মতো তিনি জীব-জগৎ ও প্রকৃতির জন্যও রহমত ছিলেন।

ছয়. তিনি ছিলেন বিশ্বনবী। রসুল (সা.) মক্কায় জন্মগ্রহণ করলেও তিনি শুধু আরবের নবী ছিলেন না। তিনি ছিলেন পৃথিবীবাসীর নবী। আরবদের এ কথা বলার কোনো ক্ষমতা নেই যে, মুহাম্মদ (সা.) শুধু আমাদের নবী। বরং আফ্রিকার গহীন জঙ্গলে বসবাসকারী কোনো মানুষও যদি ঈমান আনে, তবে মুহাম্মাদ (সা.) তারও নবী। সেও বুকভরে বলতে পারে, তিনি আমার রসুল।

সাত. আল্লাহ কোরআনে বিভিন্ন নবীকে নাম ধরে সম্বোধন করেছেন। কখনো বলেছেন, হে আদম। কখনো বলেছেন, হে ইবরাহিম। কিন্তু কোথাও তিনি বলেননি, হে মুহাম্মাদ। বরং যেখানেই মুহাম্মাদ (সা.)-কে সম্বোধন করে কোনো কথা বলার প্রয়োজন হয়েছে, তিনি বলেছেন, হে নবী অথবা হে রসুল। কোথাও আবার আদুরে সম্বোধন করে বলেছেন, হে কম্বলাবৃত, হে বস্ত্রাবৃত। একজন মানুষ কতটা সম্মানিত হলে খোদ আল্লাহও তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন!

আট. রসুল (সা.) ছিলেন সারসমৃদ্ধ কথার অধিকারী। অল্প কথায় তিনি গভীর মর্মসমৃদ্ধ বক্তব্য উপস্থাপন করতেন। উদাহরণস্বরূপ বিদায় হজের ভাষণের কথা বলা যায়। বিদায় হজের ভাষণ এতটাই সংক্ষিপ্ত, মুদ্রিত হলে এর জন্য এক পৃষ্ঠাই যথেষ্ট। অথচ সংক্ষিপ্ত এই ভাষণের মর্মার্থ সুবিস্তৃত। এর তাৎপর্য সুগভীর।

নয়. হাউজে কাউসারের অধিকারী। পরকালের রসুল (সা.)-কে বিশেষ পুরস্কার হিসেবে হাউজে কাউসার দেয়া হবে। আল্লাহ বলেছেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাকে কাউসার দান করেছি (সুরা কাউসার) এর উপহার আমাদের নবীর জন্য খাস। অন্য কোনো নবীকে এটা দেয়া হবে না।

দশ. তিনি শেষ নবী। তার পরে পৃথিবীতে আর কোনো নবী আসবেন না। এটাও রসুল (সা.)-এর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

এখানে নবীজির অসংখ্য বৈশিষ্ট্য থেকে দশটি বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আমরা যদি উভয় জগতে সফল হতে চাই, তবে নবীজির আদর্শ ধারণ করার কোনো বিকল্প নেই।

জুমার মিম্বর থেকে : সাব্বির জাদিদ

সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন