article

ধর্ম অবমাননা কাঠামোগত ইসলামবিদ্বেষের ফল

১৭ অক্টোবর, ২০২৫, দুপুর ১২:৪২

শায়খ আহমাদুল্লাহ

এ দেশের প্রত্যেক ধর্মের মানুষই নিজ নিজ ধর্মের প্রতি আন্তরিক ও শ্রদ্ধাশীল। কোথাও ধর্ম অবমাননার ঘটনা ঘটলে দেশের মানুষ আহত ও সংক্ষুব্ধ হয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, প্রশাসন, একশ্রেণির গণমাধ্যম ও শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামোর মধ্যে ইসলামবিদ্বেষের বিষ এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে, নিয়মিত বিরতিতে বিভিন্ন স্থানে ধর্ম অবমাননার ঘটনা ঘটছে।

শুধু তাই নয়, প্রশাসন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা কথিত অভিজাত অঙ্গনে ইসলামকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা এবং ইসলাম পালনকারীদের কোণঠাসা করে রাখার প্রবণতাও ভয়াবহভাবে বেড়ে চলেছে।

চলতি বছরের আগস্টে ঢাকার একটি নামকরা কলেজে এক শিক্ষক হিজাব পরার কারণে ২২ জন ছাত্রীকে ক্লাসরুম থেকে বের করে দেন। ২০২২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের একটি পরীক্ষার নোটিশে বলা হয়েছিল, পরীক্ষার সময় ছাত্রীদের মুখ ও কান খোলা রাখতে হবে। ২০২১ সালে একটি প্রতিষ্ঠান শুধু দাড়ি থাকার কারণে এক তরুণকে চাকরিতে অযোগ্য ঘোষণা করে, যদিও তার অন্যান্য সব যোগ্যতা ছিল।

একশ্রেণির গণমাধ্যম আবার দাড়ি রাখা বা টাখনুর ওপরে প্যান্ট পরাকে জঙ্গিবাদের লক্ষণ হিসেবে উপস্থাপন করেছে বিভিন্ন সময়ে। শুধু তাই নয়, নামাজ, টুপি কিংবা দাড়ির কারণে কর্মীর পদোন্নতি আটকে দেওয়া এবং কোণঠাসা করে রাখার উদাহরণও অসংখ্য। টাখনুর ওপরে প্যান্ট, দাড়ি ও টুপি ইসলামের সুস্পষ্ট নির্দেশনা হলেও প্রশাসন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও একাংশের গণমাধ্যমের মাধ্যমে এসব ইসলামী প্রতীকের নেতিবাচক উপস্থাপন কাঠামোগত ইসলামবিদ্বেষেরই বহিঃপ্রকাশ।

আমরা সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাই জ্ঞান অর্জনের জন্য, ইসলামবিদ্বেষী করার জন্য নয়। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ, শিক্ষকদের মানসিকতা ও পাঠ্যক্রম এমনভাবে গঠিত, যেখানে ইসলাম পালনকারীদের সেকেলে, কুসংস্কারাচ্ছন্ন বা পিছিয়ে পড়া হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। ফলে তরুণ প্রজন্মের একাংশ ইসলামের প্রতি বিরূপ মনোভাব নিয়ে বেড়ে উঠছে, যা কাঠামোগত ইসলামবিদ্বেষেরই ফলাফল।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের দাবি বহুদিনের। কিন্তু সেই দাবি পূরণ না করে গানের শিক্ষক নিয়োগে জোর দেওয়া হচ্ছে। দেশের কত শতাংশ বাবা-মা সন্তানকে গান শেখাতে চান? সংখ্যা খুবই কম। কিন্তু প্রায় সব বাবা-মা চান, তাদের সন্তান যেন জাগতিক জ্ঞানের পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষাও লাভ করে।

সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চাহিদার ভিত্তিতে সরকার যদি ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দিত, তাহলে অভিভাবকদের অতিরিক্ত ঝামেলা পোহাতে হতো না। স্কুলই হতো প্রাথমিক ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের কেন্দ্র। অথচ সেই গণদাবি উপেক্ষা করে অল্পসংখ্যক মানুষের চাহিদায় গানের শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

রাষ্ট্রের অবকাঠামোর ভেতরে বহুকাল ধরে বপিত ইসলামবিদ্বেষের বীজের কারণেই ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগকে অনেকে অপ্রয়োজনীয় মনে করছেন। অথচ একটি রাষ্ট্রের অগ্রগতির প্রথম শর্তই হলো সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করা।

উদাহরণ হিসেবে মালয়েশিয়ার কথা বলা যায়। দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তুলনায় বহু এগিয়ে। শুধু শিক্ষায় নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও তারা উন্নতির শিখরে। অথচ তারা ইসলামকে উন্নতির বাধা মনে করেনি। ইসলামি মূল্যবোধ ধারণ করেও যে উন্নতির সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছানো সম্ভব— মালয়েশিয়া তার জীবন্ত প্রমাণ।

ক্রমবর্ধমান ধর্ম অবমাননা দেশের জন্য অশনিসংকেত। যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে এবং রাষ্ট্র যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়, তবে মানুষের ধৈর্যের বাঁধ একসময় ভেঙে পড়বে। তারা বাধ্য হবে আইন হাতে তুলে নিতে, যা রাষ্ট্রের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করবে।

অতএব, শান্তি, শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে রাষ্ট্রকে অবিলম্বে তিনটি পদক্ষেপ নিতে হবে—
১. দেশের সর্বত্র ধর্মচর্চাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখা,
২. কাঠামোগত ইসলামবিদ্বেষ দূর করা,
৩. ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।

এই তিনটি পদক্ষেপ দ্রুত না নিলে কুচক্রী মহল পরিকল্পিতভাবে ধর্ম অবমাননার ঘটনা ঘটিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। তাই জাতীয় শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে কঠোর রাষ্ট্রীয় অবস্থান এখন সময়ের দাবি।


গ্রন্থনা : সাব্বির জাদিদ

সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন