আশুরার রোজার সঙ্গে আরেকটি রোজা রাখার সুন্নাহসম্মত নির্দেশনা মূলত মুসলমানদের নিজস্বতা ও স্বাতন্ত্র্যবোধের চেতনা থেকে এসেছে। ইহুদিদের আশুরায় একটি রোজা রাখার প্রেক্ষিতে নবীজি (সা.) এই স্বাতন্ত্র্যবোধের ঘোষণা দেন। এই ঘটনায় আমাদের জন্য শিক্ষার অনেক বড় খোরাক রয়েছে। মুসলমানরা আপন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ওপর অবিচল থাকবে এবং অমুসলিমদের কর্মধারা থেকে নিজেকে আলাদা রাখবে, এটাই আশুরার দুইটি রোজার সূক্ষ্ম শিক্ষা। আজ আমাদের সন্তানদের আদর্শ, জীবনযাপন, পছন্দ-অপছন্দ, চিন্তাচেতনা— সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে অমুসলিমরা। আমাদের সন্তানদের চলাফেরা, কথাবার্তা সবকিছুর ভেতর থেকে উপচে পড়ছে পশ্চিমাদের নষ্ট সংস্কৃতি। এমনকি সন্তানদের মুসলিম ঐতিহ্যঘেঁষা নাম রাখতেও আজ আমরা হীনম্মন্যতায় ভুগছি। পশ্চিমাদের কৃষ্টিকালচার এভাবেই আমাদের মস্তিষ্ক দখল করে নিয়েছে যে, ইসলামি নামটাও আজ আমাদের জন্য লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ নবীজি (সা.) মুসলিম-স্বাতন্ত্র্যবোধের ব্যাপারে এতটাই গুরুত্ব দিয়েছে, আশুরার রোজাও যেন ইহুদিদের মতো না হয়ে যায়, তিনি সজাগ ছিলেন। সেই নবীর উম্মত হয়ে আজ আমরা শুধুই স্রোতের তালে গা ভাসিয়ে চলেছি। গাছের মৃত গুঁড়ি, তা যত বড়ই হোক, নদীর স্রোত তাকে ইচ্ছামতো ভাসিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু একটি ছোট্ট পুঁটিমাছ জলের পিঠে লেজের ঘাই মেরে উজান বাইতে থাকে। এ হলো প্রাণের শক্তি। আজ আমরা গাছের মৃত গুঁড়িতে পরিণত হয়েছি। এখনই যদি আমরা প্রাণের স্পন্দনে জেগে না উঠি, সময়ের পিঠে ঘাই মেরে স্রোতের উল্টো পথে না চলি, তবে আমাদের গন্তব্য হবে ভয়ংকর সাগরের মোহনা, যেখান থেকে কেউ প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারে না। ইসলাম আমাদের গর্বের ঠিকানা। জীবনভর আমার ইসলামি স্বাতন্ত্র্যবোধের চেতনায় উজ্জীবিত হব—এটাই হোক এবারের আশুরার দীপ্ত শপথ।
আরও পড়ুন
সারাদিন সিয়ামের পর সূর্যাস্তের প্রথম আহ্বানেই এক টুকরো খেজুর, এক ঢোক পানি কিংবা এক চুমুক শরবতে যে প্রশান্তি অনুভব হয়, পৃথিবীর অন্য কোন রাজসিক ভোজেও তা হয় না। ইফতার কেবল খাদ্য নয়, হয়ে ওঠে আনন্দের উৎস, সংযমের পুরস্কার, রহমতের বারি। তাই তো ইফতারের প্রতিটি খাদ্য কণায় লুকিয়ে থাকে গভীর স্বাদ, নিবিড় অনুভূতি, এক অপার্থিব সুখ। রোযার ইফতার কেবল উদরপূর্তি নয়, বরং আত্মার এক পরম নৈবেদ্য। সারা বছর আমরা রাতভর না খেয়ে থেকে সকালে নাশতা করি। কিন্তু সে নাশতা যত আয়োজনমুখরই হোক না কেন ইফতারের মতো অনির্বচনীয় আনন্দ-আহ্লাদ, তৃপ্তি, আত্মপ্রশান্তি তাতে থাকে না। নিশ্চয়ই এটা আল্লাহ প্রদত্ত এক অপার আনন্দ। নবী করিম (সা.)-এর ভাষায় কথাটি ফুটে ওঠেছে এভাবে—রোযাদারের জন্য দুটো আনন্দঘন মুহূর্ত রয়েছে। একটি ইফতারের সময়, অন্যটি তার প্রতিপালকের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়। (সহিহ বুখারি ১৯০৪) ইহজাগতিক কাজ এবং আল্লাহর জন্য করা পরলৌকিক কাজের পার্থক্য এখানেই।