ফেসবুক থেকে | শিশুর পরিচর্যা

videocard
পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে প্রতিক্রিয়া

প্রতি বছর এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্টকে কেন্দ্র করে যে লাগামহীন উন্মাদনা দেখা যাচ্ছে, তা আমাদেরকে শঙ্কিত ও ব্যথিত করছে। পরীক্ষায় ভালো ফল করা নিঃসন্দেহে আনন্দের ঘটনা। কিন্তু সেই আনন্দের উদযাপন নির্দিষ্ট মাত্রার ভেতর হওয়াই শোভনীয়। এদেশের মিডিয়াগুলোও এই পরীক্ষাকে ঘিরে যেভাবে সংবাদ কাভারেজ দেয়, অন্য কোনো দেশে এর নজির আছে বলে আমাদের জানা নেই। এই অতি উন্মাদনার কারণেই পরীক্ষায় যারা ভালো করতে পারে না, তাদের ভেতর অপরাধবোধ তৈরি হয়, তারা ডিপ্রেশনে চলে যায়। এক পর্যায়ে অনেকে আত্মহত্যার মতো ভয়ংকর সর্বনাশা পথ বেছে নেয়। এই শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার পেছনে আমাদের মিডিয়ার যেমন দায় আছে, তেমন দায় আছে সন্তানদের প্রতিযোগিতার বাজারে ছেড়ে দেয়া মা-বাবাদেরও। সামগ্রিক জীবনের সাফল্যের তুলনায় একটি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা আঁচড় রেখে যাওয়ার মতো বড় ঘটনা নয়। তারপরও এই উন্মাদনা প্রমাণ করে, আমরা দিন দিন খুব বেশি ভোগবাদী, বস্তুবাদী এবং পরকাল ভোলা ইহজাগতিক মানুষ হয়ে উঠছি। খুব কম বাবা-মাই আছেন, সন্তানের সৎ কাজকে যারা উচ্ছ্বাস ভরা হৃদয়ে অভিনন্দিত করেন। বিপদের মুখেও ছেলে সত্য কথা বলেছে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে, সুযোগ থাকার পরও ঘুস নেয়নি— এই আনন্দে বাবা-মা কখনো মিষ্টি বিতরণ করেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন ঘটনা হয়তো একবারও ঘটেনি। অথচ জিপিএ ৫ পেলে মিষ্টির বন্যা বইয়ে দেব—এমন ঘোষণা আমরা অহরহ শুনছি। সততা নয় বরং পরীক্ষায় পাশ করাই জীবনের প্রধান লক্ষ্য হয়ে ওঠায় অনেক বাবা-মা প্রয়োজনে সন্তানের নকল করারও অনুমোদন দেন। পাশের ভালো ছাত্রের খাতা দেখে লিখতে না পারলে অনেক সন্তান ভর্ৎসনার শিকার হয়। কী অদ্ভুত মনোবৈকল্য আমাদের! জিপিএ ৫ সাময়িকের সাফল্য। কিন্তু মুমিনের জীবনে চূড়ান্ত সাফল্য তো তখনই আসবে, যখন সে জাহান্নাম থেকে বেঁচে চিরসুখের জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে এটাকেই আসল সফলতা বলেছেন। আর বুদ্ধিমান তো সে, যে কিনা সাময়িকের সাফল্যের ফাঁদে আটকা না পড়ে চূড়ান্ত সফলতার জন্য চুপচাপ কাজ করে যায়।

আরও পড়ুন

videocard
পিতা-মাতার বিরুদ্ধে সন্তানের মামলা

এই বৃষ্টিস্নাত দিনে ইংলিশ মিডিয়াম পড়ুয়া আলোচিত সেই মেয়েটির বাবা-মার কথা ভাবছি। নিশ্চয় বুকে জমানো সবটুকু আবেগ, ভালোবাসা ও মমতা দিয়ে তারা মেয়েটিকে বড় করছিলেন। ছোটবেলায় মেয়েটি যখন জ্বরে পড়েছে, বাবা-মার অসংখ্য নির্ঘুম রাত নিশ্চয় মেয়ের শিয়রে বসে কেটেছে। মেয়েটি কোনো কিছু পাওয়ার আব্দার করলে বাবা-মা হয়তো হৃদয় উজাড় করে তা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। নিজেদের কষ্টার্জিত উপার্জন নিশ্চয় তারা ব্যয় করেছেন মেয়েটির সুস্থ-সবল ও হাসি-আনন্দে বেড়ে ওঠার জন্য। নিজেদের চেয়ে মেয়েকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন সবকিছুতে। মেয়ে বাবা-মার চক্ষু শীতলকারী সন্তান হবে— আর দশজন বাবা-মার মতো এমন স্বপ্ন তারাও নিশ্চয়ই লালন করতেন। কিন্তু কে জানত, জীবনের মাঝপথে এসে ডানাভাঙা পাখির মতো তাদের সকল আশা লুটিয়ে পড়বে মাটিতে! সন্তানের করা মামলায় সেই বাবা-মাকে যখন জনাকীর্ণ আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছিল, অসংখ্য মিডিয়ার সামনে তীর্যক গলায় মেয়েটি যখন বাবা-মাকে ক্রিমিনাল বলছিল, তাদের মনের অবস্থা কেমন হয়েছিল? নিশ্চয় তারা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। বড় বেশি মায়া হচ্ছে ওই হতবাক বাবা-মার জন্য। আমরা প্রায় সকলেই ছোটবেলায় মা-বাবার শাসনের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি। এই পরিণত বয়সে এসে সেসব দৃশ্য যখন চোখের সামনে ভেসে ওঠে, বাবা-মায়ের প্রতি শ্রদ্ধায় নুয়ে পড়ে হৃদয়, চক্ষু হয়ে ওঠে অশ্রুসজল। তাদের সেসব আদরমাখা শাসনই আমাদের আজকের সাফল্যের সিঁড়ি। আজ এই মুহূর্তে একটি কথা বড় বেশি মনে হচ্ছে, তাদের শাসন ছিল অন্যদের আদরের চেয়েও মূল্যবান, জীবনের পথ নির্দেশক। আজকাল প্রায়ই সন্তানরা আমাদের স্বপ্নভঙ্গ করছে। এর দায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমাদের, মা-বাবাদের। পশ্চিমা সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমরা অনেক বেশি বস্তুবাদী, ভোগবাদী, আত্মকেন্দ্রীক ও ক্যারিয়ারিস্ট হয়ে উঠছি। সন্তান প্রতিপালনের ক্ষেত্রে ঈমান, আত্মপরিচয়, ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধকে আমরা উপেক্ষা করছি। সন্তানের ক্যারিয়ার, ইহজাগতিক সাফল্যই আমাদের কাছে হয়ে উঠছে প্রধান অর্জন। ফলে একটা সময় আমাদের সন্তানরা হয়ে উঠছে স্বেচ্ছাচারী, উশৃঙ্খল, বেপরোয়া। যার সর্বশেষ পরিণতি আমরা দেখলাম, অধিকার খর্বের অভিযোগে বাবা-মার বিরুদ্ধে সন্তানের মামলা। এটাই বোধহয় সতর্কতার কফিনে শেষ পেরেক। এরপরও যদি আমরা না শুধরাই, পড়াশোনার পাশাপাশি সন্তানকে আত্মপরিচয় ও মূল্যবোধ না শেখাই, তবে আফসোস, হতাশা ও স্বপ্নভঙ্গের বেদনাই হবে আমাদের চিরসাথী। সেই দুর্দিন আসার আগেই আসুন সচেতন হই।

আরও পড়ুন